আশ্রয়ণ প্রকল্পের নাম শুনলেই ভেসে ওঠে শেখ হাসিনার নেওয়া এক মানবিক উদ্যোগের ছবি। তিনি সারাদেশে হাজার হাজার গৃহহীন মানুষকে ঘর দিয়েছিলেন। শুধু টিন-দেয়াল তোলা একখানা ঘর নয়- এর সাথে ছিল জমি, বিদ্যুৎ, পানি, টয়লেট, স্কুল, ক্লিনিক। মানুষ সত্যিই ভেবেছিল, গৃহহীনতার অভিশাপ শেষ হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি দেখাশোনা করতেন। অনেক জায়গায় তিনি নিজে গিয়ে সুবিধাভোগীদের সাথে কথা বলেছিলেন। “কেউ গৃহহীন থাকবে না”- এ প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবায়ন করতে তিনি ছিলেন একেবারেই সিরিয়াস।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আশ্রয়ণ প্রকল্প ছিল শুধু একটি নির্মাণ কর্ম নয়, এটি ছিল দরিদ্র, গৃহহীন মানুষের জীবনে স্থায়ী আশার প্রতীক। শেখ হাসিনা সুদূর প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের মাথা গোঁজার ঠাঁই উপহার দিয়েছিলেন।
কিন্তু আজকের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইউনূসের অবৈধ ক্ষমতা দখলের পর সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে চলছে লুটপাট, ভাঙচুর আর আগুন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে। আশ্রয়ণ ঘরের দরজা-জানালা খুলে নিয়ে যাচ্ছে, আসবাবপত্র লুট করছে, এমনকি মানুষের গরু-ছাগল পর্যন্ত চুরি হচ্ছে। ভয়াবহ হলো- অনেক জায়গায় ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাতারাতি আবারও গৃহহীন হয়ে পড়ছে সেই মানুষগুলো, যারা একসময় মনে করেছিল জীবনের নিরাপদ আশ্রয় তারা পেয়ে গেছে।
এখন দেখা যাচ্ছে, যে ঘরগুলো একসময় আশার প্রতীক ছিল, আজ সেগুলোই আতঙ্কের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে আশ্রয়ণ প্রকল্প ভেঙে পড়ছে, সাথে ভেঙে পড়ছে হাজার হাজার মানুষের ভবিষ্যৎ।
আশ্রয়ণ প্রকল্প ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি। শেখ হাসিনার উদ্যোগে এটি শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই দেয়নি, মানুষকে দিয়েছে বাঁচার সাহস। অথচ এখন সেই অর্জন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে হামলা আর অগ্নিসংযোগে।
প্রশাসনের শাসনরত অবস্থায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনাসমূহ ভয়ানক পরিসরে বেড়েছে:
নারায়ণগঞ্জ (রূপগঞ্জ) – ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ভোররাতের অন্ধকারে সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীরা ঢুকে পড়ে। ২০টি ঘরে হামলা চালিয়ে দরজা–জানালা ভাঙচুর ও টিভি, ফ্রিজ, মোবাইলসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করেন; পরিবারের সদস্যরা প্রাণে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
মুন্সিগঞ্জ (পঞ্চসার) – ৮ আগস্ট ২০২৪ ভোরে জমি নিয়ে বিরোধের মুখে ১৩টি ঘরে হামলা, দরজা ও জানালা ভাঙচুর, লুটপাট—অনেকে মারধরের আশঙ্কায় ঘর ছেড়ে পালান।
মৌলভীবাজার (কমলগঞ্জ) – একটি সাইনবোর্ড ভেঙে দেয়া হয় ‘আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে বাধা দিতে, এসি-ল্যান্ডসহ কয়েকজন আহত হন ইটপাটকেল ছোড়ো ঘটনায়।
সুনামগঞ্জ (ধর্মপাশা উপজেলায়) – ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ রাতেই এক আশ্রয়ণ ঘরে আগুন লেগে একই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু হয়। কারণ এখনও অনিশ্চিত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ন প্রকল্প ছিল এক সময়ের মানবিক ও সামাজে উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি। মানুষের জন্য সেই ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ। আজ, ইউনূসের সময় সেই স্বপ্নগুলো লুটপাট, ভাঙচুর ও আগুনে ছিন্নভিন্ন হয়েছে। শত শত পরিবারের ঘরবাড়ি হারিয়ে গেছে নীরবে।